মৌলভীবাজার সংবাদ প্রতিদিন

মৌলভীবাজার সংবাদ প্রতিদিন

অবিলম্বে চা শ্রমিকের সংগঠনের প্রভাবশালীদের উৎখাত করে লুঠপাট কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবীতে সংবাদ সম্মেলন

 



বিশেষ প্রতিনিধিঃ

বৈষম্যবিরোধী চা শ্রমিকরা: অভিলম্বে চা শ্রমিকের সংগঠনের প্রভাবশালীদের উৎখাত করে লুঠপাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বৈষম্যবিরোধী চা শ্রমিক আন্দোলন ছাত্র, তরুন যুবকসহ সংশ্লিষ্টরা।

আজ শুক্রবার সন্ধায় মৌলভীবাজার শহরের আর এস কায়রান রেস্টুরেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনে গীতা রানী কানু লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন- চা শ্রমিক,ছাত্র, তরুন যুবকসহ সংশ্লিষ্টরা।

সংবাদ সম্মেলনে তারা অভিযোগ করে করেন, মালিকদের কাছ থেকে সম্পূর্ণ বকেয়া মজুরি আদায় করতে পারছে না সংগঠনটি। নেতৃত্বে থাকা অনেক নেতাই নিষ্ক্রিয় এবং চাকরি থেকে অবসরে গেছেন। এর ফলে আন্দোলন বা চা–শ্রমিকদের হয়ে কথা বলার মতো নেতার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আন্দোলন বা চা–শ্রমিকদের হয়ে কথা বলার মতো নেতার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনের জন্য আন্দোলন–সংগ্রাম করছেন জানিয়ে চা জনগোষ্ঠীরা। সংবাদ সম্মেলনে বলেন- ‘আমরা চাই নির্বাচন হোক, যেন সঠিক নেতৃত্ব এসে চা–শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে কাজ করতে পারে। তারা আরো বলেন- তাদের দাবী দাওয়া আদায় না হলে কঠোর আন্দোলনের হুসিয়ারী দেন।

২০০৬ সাল থেকে আজ অবধি চা শ্রমিকদের নিজের হাতে গড়া, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও তার শ্রীমঙ্গলস্থ প্রধান কার্যালয় লেবার হাউস কার্যত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শ্রম অধিদপ্তর দ্বারা পরিচালিত হয়ে এসেছে। যা চা শ্রমিকদের অধিকার হরন সহ তাদের অধিকারের কথা বলার কণ্ঠ রোধ করে রেখেছে এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার লক্ষ্যে ২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন স্বাধীনভাবে চা শ্রমিকদের দ্বারাই পরিচালনা করার উদ্দেশ্যে শ্রম অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট মহলে অনেক আবেদন করেও কোন সুরাহা পাওয়া যায় নি।




লুটেরা চা শ্রমিক নেতা ও শ্রম অধিদপ্তরের কুট কৌশলে সাধারণ চা শ্রমিকসহ তাদের পোষ্যরা নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। শ্রম অধিদপ্তরের প্রহসনের নির্বাচন দ্বারা তাদের বংশবদ একটি পক্ষকে জিতিয়ে দেওয়ার লক্ষে সরকারি কোষাগারের টাকা লুটপাট করেছে। অপরদিকে বর্তমান সাধারণ দরিদ্র চা শ্রমিকের কষ্টার্জিত চাঁদার টাকা লুটপাট করার পায়তারা করছে। হাই কোর্টে মামলা দিয়ে আমাদের আইনী মামলা
চলছে ও চা শ্রমিকদের দারিদ্রতার কারণে শ্রম দপ্তরের উচ্চপদে আসীন, সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে অসুস্থ প্রতিযোগীতায় ঠিকতে পারছে না। ফলে বাংলাদেশের চা শিল্পে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অবাঞ্চিত ঘটনা ঘটে চলেছে। চা বাগান হতে সাধারণ শ্রমিকদের উচ্ছেদ, কথায় কথায় ব্যক্তিগত বিরোধে জেরে চা শ্রমিকদের চাকুরিচ্যুত করা এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। আরো বলতে চাই যে, আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখতে
পারেন, যে বহু চা বাগানে পেমেন্ট, রেশন শ্রমিকদের বন্ধ আছে, শ্রমিকরা অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। আজকের এই দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির দিনে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন মজুরি পাওয়া চা শ্রমিকরা ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, ঠিক সেই মুহুর্তে সাধারণ চা শ্রমিকদের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরানোর লক্ষ্যে নির্বাচন নির্বাচন খেলা দিয়ে সাধারণ চা শ্রমিকদের চাঁদার টাকা নিয়ে শ্রমিকদের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরানোর লক্ষ্যে নিজেদের পকেট ভারী করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ যে, বাংলাদেশের কোন ট্রেড ইউনিয়নে সরকারী কোন কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশনার হতে পারেন না। কিন্তু শ্রম অধিদপ্তর চা শিল্পের ট্রেড ইউনিয়নের ক্ষেত্রে নিজেরা নির্বাচন কমিশনার হয়েছেন, যা উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপন্থী। আমরা এই প্রক্রিয়ার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি।

শ্রম অধিদপ্তরের সাহায্য সহযোগিতায় আজ যারা ট্রেড ইউনিয়ন দখল করে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে তাদের দ্বারা চা শ্রমিকদের যে সীমাহীন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এসময় লিখিতভাবে আরো জানান- শ্রম অধিদপ্তরের পালিত শ্রমিক নেতাদের দ্বারা, বিগত ১৬ বছরে দেয়া সাধারণ শ্রমিকের ২৫ কোটিরও বেশী টাকা আত্মসাৎ করেছে। চা শ্রমিকদের ২ বছরে এখনো কোন মজুরি চুক্তি, বৈঠক আমাদের চোখে পড়েনি, যার কারণে শ্রমিকরা প্রায়ই ৩৬ হাজারা টাকা মজুরি হতে বঞ্চিত হয়েছে। চা শ্রমিকরা গ্রাচ্যুয়িটি ফান্ড থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বহু বাগান বন্ধের পথে।অনেক চা শ্রমিকের সন্তানেরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে আছে। বাসস্থান ও নিম্নমানের চিকিৎসা সেবা চা শ্রমিকদের আরো নাজেহাল করে তুলেছে। ২০২০-২০২২ সালের ঘোষিত মজুরি থেকে, বকেয়া মজুরি ২০,৫০০/- টাকা হতে ১লক্ষ শ্রমিক বঞ্চিত হয়েছে। আমরা চা শ্রমিকের বিভিন্ন সমস্যাহেতু এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দেন।

তারা আলো বলেন- শ্রম উপদেষ্টা বরাবর, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক, শ্রীমঙ্গল থানাসহ নানা জায়গায় অভিযোগ করেও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও অবৈধ অর্থের কারণে কোন সুবিচার পাইনি। বর্তমানে দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক অবস্থার কারণে আমরা আবারও শ্রীমঙ্গল থানা সহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে, লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। আশা রাখি বাংলাদেশের এক লক্ষ চা শ্রমিকের অধিকার আদায় ও ন্যায়বিচার পাবো।

মাধ্যমে বর্তমান অবৈধ কমিটিকে বাতিল করে, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নে এডহক কমিটি দেওয়ার জন্য একদফা দাবী পেশ করা হলেও আজ পর্যন্ত কোন সদুত্তর না পাওয়ার কারণে সংবাদ সম্মেলনেসহ আগামী শনিবার পর্যন্ত কোন সুরাহা না হলে রবিবারে শ্রীমঙ্গলস্থ বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সম্মুখে বিক্ষোভ মিছিল এর মাধ্যমে রাজপথে আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।

উল্যেখ্য যে, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৮সালে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী,২০২১ ও ২০২৪সালে আরও দুটি নির্বাচন আয়োজনের কথা থাকলেও তা আর হয়নি। এর ফলে দীর্ঘ সাত বছর ধরে দায়িত্বে আছে একই কমিটি। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, অর্থের অভাবে নির্বাচনের আয়োজন করা যাচ্ছে না। সরকার এ ব্যয় বহন করতে চাইছে না। আর এটির সাবেক নেতাদের দাবি, নির্বাচন না হওয়ায় নেতৃত্ব দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।

Post a Comment

0 Comments